উপোস করলে শরীরে কি উপকার হয় জানেন কি ? জেনে নিন আর শুরু করুন এই দুর্গাপুজো থেকেই। Benefit of fasting in Durgapuja.



মানব জীবনে সুস্থ শরীরে দীর্ঘ জীবন লাভের প্রয়াসে উপবাস তত্ব একটা সুগম পথ। আয়ুর্বেদ মতে "লঙ্ঘনং পরমঔষধম"। এর তাৎপর্য,উপবাস সর্বরোগের পরম ঔষধ। সুতরাং আমাদের সুস্থ শরীরে দীর্ঘ জীবন লাভের জন্য উপবাস বিধি একান্ত আবশ্যক।শ্রমের পর যেরকম বিশ্রাম প্রয়োজন সেরকম পরিপাক যন্ত্রেও বিশ্রাম প্রয়োজন  এবং সেটা একমাত্র উপবাসেই সম্ভব।আমাদের পেটের মধ্যে কিরকম অবস্থা তা আমরা কখনো দেখতে পাই না, কিন্তু কল্পনা করুন একটা জায়গায় মাটিতে দীর্ঘদিন জল ঢাললে যেরূপ মাটিতে পচে বজ বজ করে এবং নানারকম জীবাণু জন্মায় সেরকম পেটের ঐ ফুলের মতো নরম জায়গায় দীর্ঘদিন ক্রমাগত খাদ্যরস নিঃসরণের ফলে জায়গাটি বজ বজ করে এবং তাতে নানা প্রকার জীবাণু বাসা বাঁধে এবং এর থেকেই নানা রোগের সৃষ্টি হয়।ভেজা মাটিতে জল ঢালা বন্ধ করে শুকিয়ে নিলে যেমন মাটি জীবাণুমুক্ত হয় তেমনই আমাদের পেটের মধ্যে যদি মাঝে মাঝে খাবার দেওয়া বন্ধ রাখি তাহলে ঐ জায়গাটি শুকিয়ে যায় এবং তা জীবাণুমুক্ত হয়। ফলে নানাপ্রকার রোগের থেকে আমরা নিরাপত্তা পাই। সুতরাং শাস্ত্রমতে আমাদের এই উপবাস বিধি রোগ বিনাশের উৎকৃষ্টতম পন্থা।এইজন্যই মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেও ধৰ্ম পালনের জন্য উপবাসের বিধি আছে।রমজান মাসে একমাস কাল দিনে আহার নিষিদ্ধ। তাই উপবাস একটি উৎকৃষ্ট স্বাস্থ্যসম্মত পন্থা। 




প্রতিদিনের ন্যায় উপবাসের দিনও ব্রহ্মহ মুহূর্তে শয্যা ত্যাগ করে প্রচুর জলপান (উষাপান) করবে এবং মলত্যাগ সেরে তারপর উপবাস বিধি পালন করবে। মলত্যাগ না সেরে উপবাস করলে ফল দুরাশা মাত্র। উষাপান না করে মলত্যাগ করলে শরীরের মধ্যে দূষিত পদার্থ রয়ে যায়। কিন্তু উষাপান করে মলত্যাগ করলে মল নিঃসরণের সুবিধা হয় এবং দেহের মধ্যে যে দূষিত পদার্থ থাকে তা নিষ্কাশন হয় মূত্রের সহিত। তাই প্রতিদিন সর্বাগ্রে এই সমস্ত প্রাতঃকৃত্য সমাপন অবশ্যকরণীয়।এরপর নির্জলা উপবাস করলে অতিশয় ফললাভ হয়ে থাকে। সমস্ত তিথিতে বা যেকোনো সময়ই উপবাস পালন করা হোক না কেন তা যদি নির্জলা উপবাস হয় তাহলে সর্বোচ্চ ফল লাভ করা যায়। নির্জলা উপবাস অতীব স্বাস্থ্যকর। এতে যেকোনো প্রকার পুরাতন ব্যধি অচিরে মন্দীভূত হয়। উপবাসের দিন ডাবের জল,দুধ বা ফলের রস অল্পমাত্রায় দু-তিন বার খাওয়া যেতে পারে।ছয় মাস অন্তর বা বৎসরে দুবার একসঙ্গে দু-তিন দিন উপবাস অতিশয় উপকারী। এতে বিভিন্ন রোগ ব্যাধির মূল চিরতরে উৎপাটিত হয়। এছাড়া পূর্ণিমা,অমাবস্যা ও পূজা পার্বন ইত্যাদি সময়ে বিধি অনুসারে উপবাস পালন করা বিধেয়।



দীর্ঘ উপবাসের সমাপ্তিতে খাদ্য খাবার থেকে অতি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।এই সময় কোনো প্রকার কঠিন বা গুরুপাক খাদ্য খাবার পেটে না যাওয়াই ভালো;নইলে যে উদ্দেশ্যে উপবাস তা সবই ব্যর্থ হবে উপরন্তু নতুন করে রোগ জন্মাবার সম্ভাবনাও দেখা দেবে।কারণ উপবাসে শরীরের জলীয় অংশ বহির্গত হওয়ায় দেহের সমস্ত যন্ত্রাংশ শিথিল হয়ে পড়ে ও দেহযন্ত্রগুলি সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকে।এই সময় কোনো প্রকার কঠিন খাদ্য-দ্রব্যাদি গ্রহণ করলে দেহযন্ত্রের উপর আকস্মিক চাপ পড়ে,ফলে আহার জনিত ঢেঁকুড় উঠতে পারে। খাদ্যবস্তু ঠিকমত জীর্ণ বা ভঙ্গুর হতে পারে না ফলত অজীর্ণজনিত রোগ জন্মানোর সম্ভাবনা প্রবল।

উপবাসের কয়েকদিন আগে থেকে লঘুপাক দ্রব্য ভোজন করণীয়। উপবাস ভাঙার সময় প্রথমে জলীয় খাদ্য দ্বারা উপবাস ভঙ্গ করে তারপর লঘুপাক খাদ্য দ্বারা পূর্ণ আহার করলে এবং কেবলমাত্র একবার আহার করলে সম্পূর্ণ ফলপ্রাপ্তি হয়.উপবাসান্তে একাধিকবার খাদ্যগ্রহণ মোটেই সমীচীন নয়
 
উপবাসে শরীরের দূষিত পদার্থ বিনষ্ট হয় ও জলীয় অংশ নির্গত হয় ও পূর্ব সঞ্চিত কুপিত তাপ দেহ থেকে বহির্গত হওয়ায় দেহ হিমশীতল হয় এবং দেহযন্ত্র সবল,সতেজ ও সঞ্জীবিত থাকে। সুতরাং যদি সুস্থ -সবল, সুখী ও পূর্ণাঙ্গ এবং দীর্ঘায়ু হতে চাও তবে বিধি অনুসারে উপবাস পালন কর।মিতাহার বা স্বল্পাহার ব্যক্তিই দীর্ঘজীবী হতে পারে অধিক ভোজনে দীর্ঘজীবন লাভ সম্ভবপর নয়। প্রসঙ্গতঃ একথা মনে রাখা আবশ্যক যে,খাবার জন্য বাঁচা নয়, বাঁচার জন্য খাওয়া। সুতরাং এই দুর্গাপুজোতেই শুরু হোক সঠিক উপবাস রীতি। আর সকলে মা দুর্গার আশীর্বাদ ধন্য হয়ে সুস্থ জীবন লাভ করুন।

তথ্যসূত্র: যোগাচার্য অনুপ মন্ডল

কৌশিক সাধুখাঁ 

  

Comments

Popular posts from this blog

Medicine for weight gain, which is safe. /মোটা হওয়ার ওষুধ, কোনটি সঠিক জেনে নিন।

FIRST AID - BASIC TIPS AND HOME REMEDIES

ACIDITY AND CONSTIPATION- EASY HOME REMEDIES অম্লপিত্ত ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া আয়ুর্বেদিক সমাধান