মশলার হলুদ খাচ্ছেন- এর উপকার জানেন কি?/benefits of cooking spice haldi

মশলার হলুদ খাচ্ছেন- এর উপকার জানেন কি?


          "হলুদ" -  গৃহিণীর রান্নাবান্নার একটি অপরিহার্য মশলা। বিজ্ঞানীরা বিস্তর গবেষণায় দেখেছেন যে নানা রোগ সারাতে ও প্রতিরোধে হলুদ এক অব্যর্থ দাওয়াই। অতীতের দিনে আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞরা হলুদের নানা অংশ বিশেষ করে পাতা, ফুল বা ছাল -এর নির্যাস চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করতেন।বর্তমানে বিজ্ঞানীরা আধুনিক গবেষণার মাধ্যমে লক্ষ্য করেছেন যে এসব নির্যাসে উপকারী ও অপকারী দুধরণের উপাদানই থাকে। তাই আধুনিক বিজ্ঞানীদের মুখ্য উদ্দেশ্য হল উপকারী বা সক্রিয় উপাদানকে আলাদা করে সেই উপাদানগুলোর সঠিক পরিমাণ বা মাত্রা নির্ধারণ করা, যাতে করে কম পরিমানে প্রয়োগ করেও সহজে রোগ সারানো যায়।

            বিজ্ঞানীরা আরও লক্ষ্য করেছেন যে হলুদের নির্যাসের বেশিরভাগ অংশটাই সক্রিয় বা উপকারী অর্থাৎ এদের ভেষজ গুন নিঃসন্দেহে অকল্পনীয় আর বাকি অংশের মধ্যে অপকারী উপাদান একেবারেই নগন্য। মূলতঃ সেই অংশের মধ্যে খুব বেশি পরিমানে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলেও বিষক্রিয়া বা টক্সিক এফেক্ট প্রায় নেই বললেই চলে।

           হলুদ নিয়ে গবেষণায় জানা গেছে হলুদের মূলের নির্যাসের অধিকাংশ অংশটাই একরকম ফেনল জাতীয় যৌগ (পলিফেনলস )। আর এজন্যই  হলুদের মূল এই 'হলুদ' রং ধারণ করে। এই সক্রিয় যৌগটিকে বলা হয় কারকিউমিন। এটা আবার তিন ধরনের, যেমন কারকিউমিন - ওয়ান ,টু ,থ্রি। এর মধ্যে কারকিউমিন ওয়ান -ই থাকে সবচেয়ে বেশি আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ। নানা রোগে বিশেষতঃ ক্যান্সার, নিউরোডিজেনেরেটিভ ডিসঅর্ডার ,ইনফ্লামেশন ও অন্যান্য রোগবালাই যেমন পাকস্থলী ও অন্ত্রের ঘা অর্থাৎ গ্যাস্ট্রোডিওডেনাল আলসার সারাতে এটি  খুব কার্যকরী। তবে শুকনো হলুদের বদলে কাঁচা হলুদের থেকে পাওয়া নির্যাসে রোগবালাই মোকাবিলায় বেশি ফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


            এছাড়াও হলুদের কারকিউমিন ফাইটোকেমিক্যাল অম্বল,গ্যাস এবং পেটের ব্যথা কমাতেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেয়। একটু ভিন্ন ধরনের অসুখ যেমন অস্টিও আর্থারাইটিস, লিভারের অসুখ ,আথেরোক্লেরোসিস অর্থাৎ হার্টের অসুখ মোকাবিলাতেও হলুদের জুড়ি মেলা ভার। এমনকি আলকোহোল ও মানসিক চাপঘটিত পাকস্থলী ও অন্ত্রের আলসারে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন কমিয়ে ক্ষত পুরোপুরিভাবে সারিয়ে দেয়।

            হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন একাধারে কোলেস্টেরলের সিন্থেসিস কমিয়ে দেয় এবং এল.ডি.এল -এর জারণ ক্ষমতাকে বন্ধ করে। অন্যদিকে অনুচক্রিকা বা প্লেটলেটের তঞ্চন ক্ষমতাকে প্রতিহত করে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। বিভিন্ন ক্যানসার যেমন প্রস্টেট, ব্রেস্ট,ত্বক এবং কোলন ক্যানসারে হলুদের কারকিউমিন উল্লেখযোগ্য হারে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সক্ষম। তবে কিভাবে এটি ক্যানসার প্রতিরোধ করে (pathway) তা এখনো  সম্পূর্ণরূপে আবিষ্কৃত হয়নি।
         
            তবে একথা মাথায় হবে হলুদের সম্পূর্ণ গুন লাভের জন্য শুকনোর পরিবর্তে কাঁচা হলুদ ব্যবহার করাই শ্রেয়। কারণ আলোর সংস্পর্শে এলে কারকিউমিন -এর সক্রিয়তা কমতে থাকে। তাই রোদে শুকনো করা হলুদের তুলনায় কাঁচা হলুদ থেকে পাওয়া কারকিউমিন বেশি কার্যকরী।

            হলুদের ভেতর রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ,আন্টিইনফ্লামেটরি ধৰ্ম ,তাই আজও বহু মানুষ চোট আঘাতে চুন-হলুদের মিশ্রণ ব্যবহার করে উপকার পান। বেশি মাত্রায় হলুদ খেলে যে ,তেমন কোনও ক্ষতি আমাদের শরীরে হয়না সেটি গবেষণায় আজ প্রমাণিত। সর্বশেষে বলা যেতে পারে যদি সুন্দর নির্মেদ শরীর চান দিনে একবার টক দইয়ের সাথে হলুদ মিশিয়ে খান।একমাসেই তফাৎ বুঝতে পারবেন। 

কৌশিক সাধুখাঁ 
যোগাযোগ  - ৯৮৩০৪৩৯৮৭৮


Comments

Popular posts from this blog

Medicine for weight gain, which is safe. /মোটা হওয়ার ওষুধ, কোনটি সঠিক জেনে নিন।

FIRST AID - BASIC TIPS AND HOME REMEDIES

ACIDITY AND CONSTIPATION- EASY HOME REMEDIES অম্লপিত্ত ও কোষ্ঠকাঠিন্যের ঘরোয়া আয়ুর্বেদিক সমাধান